যতই ইন্টারনেট আর তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের জীবনে অধিক গুরুত্বপূর্ণ স্থান নিচ্ছে, ততই মহিলাদের সাইবার ক্ষেত্রে অধিক বুল্যিং হবার সম্ভাবনা থেকেই যায়। যখন একটি মহিলাকে ভয় দেখানো হয়, বিরক্ত করা হয়, বিব্রত করা হয় বা অসম্মান করা হয় বা অন্য ভাবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অন্য ব্যাক্তি তাকে আক্রান্ত করে, ডিজিটাল তথ্যপ্রযুক্তি বা মোবাইল ফোন দ্বারা “সাইবার বুল্যিং” সামনা সামনি করতে হয়। সোশ্যাল মিডিয়াতে আপনার প্রোফাইল ব্যাক্তিদের আপনার পোস্টে ছবি বা যেকোনো কিছু হাতিয়ে নিতে পরে। আপনারা আপনাদের প্রোফাইল ব্যবহার করে নিজের ইচ্ছামত ছবি, নিজেদের ভালো লাগা, না লাগা, ইত্যাদি তথ্য প্রদান করে থাকেন, আর সেই সমস্ত কিছুকে ব্যবহার করে সাইবার বুল্লি আপনার জীবনকে প্রহসনে পরিণত করতে পারে।
বুল্লিরা সাইবার ব্যুলিঙ্গের সাথে যুক্ত বিভিন্ন তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেকোনো ব্যাক্তিকে যেকোনো সময়ে সর্বসমক্ষে অপস্থিতে ফেলে দিতে পারে। যে সমস্ত মাধ্যমের সাহায্যে এসকল কাজ করা হয়, তার মধ্যে ইনস্ট্যান্ট ম্যাসেজিং, সোশ্যাল মিডিয়া, গেম খেলার ওয়েবসাইট এমনকি আপনার ইমেল হল অন্যতম।
সাইবার বুল্যিং হওয়ার বিভিন্ন উপায়
একজনের ব্যাক্তিগত মেসেজ অন্যের কাছে পাথিয়ে দেওয়া
একটি মহিলা নিজের পর্দায় নাম এমন রাখতেই পারেন, যা আরেকজন মহিলার সাথে মেলে। নামের মধ্যে একটি অক্ষরের এদিক সেদিক থাকতেই পারে। বুল্লিরা সেই সুযোগের ব্যবহার করতে পারে একজনের নাম করে অন্যকে অসংলগ্ন জিনিস বলার মাধ্যমে।
একজন সাইবার অপরাধী খুব সহজেই সেই ব্যাক্তিগত তথ্য ছড়িয়ে দিতে পারে ইন্টারনেটে যা আর ব্যাক্তিগত থাকবে না।
তাই কখনই ইন্টারনেট চ্যাট রুমের অন্য একজন গ্রাহকের সংলাপ, তার অনুমতি ছাড়া কারুকে পাঠাবেন না।
অন্যকে মূর্ত করে গুজব ছড়ানো
পরচর্চা মুলক বা প্রতারনা মুলক মেল ছড়িয়ে গুজব সৃষ্টি করে অন্য মহিলাকে আঘাত করা। বুল্লিরা একটি নিন্দা মূলক গ্রুপে একজন শিকার সেজে, যাকে বিরক্ত করতে চায় তার নাম ও ফোন নম্বর ব্যবহার করে, কোন উৎসেচক মূলক মন্তব্য করতে পারে, যাতে সেই নিন্দামুলক গ্রুপের কাজ সহজ হয়ে যায়।
তাই কোন ক্ষেত্রে কোন নিন্দামুলক মেল বা কোন গুজব ইমেল বা মবাইলের মাধ্যমে অন্যের ভূমিকা পালন করে পাঠাবেন না।
হতবুদ্ধিকর ছবি বা ভিডিও পোস্ট করা
একটি মহিলার স্নানককশের বা বস্ত্রপরিবর্তন করার ঘরের ছবি বা ভিডিও অনলাইনে অন্যদের ফোনে পাঠানো যেতে পারে।
তাই কোন সময়ে কারুর বা নিজের ছবি বা ভিডিও নির্দেশিকা না মেনে পোস্ট করবেন না।
ওয়েবসাইটের বা ব্লগের ব্যবহার করে
মহিলারা কখনো কখনো ওয়েবসাইট বা ব্লগ তৈরি করতে পারেন, যা অন্য কোন মহিলাকে বিপদে ফেলতে পারে বা অসম্মান করতে পারে। তারা ওয়েবপেজ তৈরিই করেন কোন একটি সংস্থা বা কোন মহিলাকে অসম্মান করতে।
কারুকে যেকোনো স্থানেই অপমান বা অস্মমান করা অত্যধিক ভাবে বাজে শিষ্টাচার। তাই সেটা কখনই করবেন না।
ফোনের মাধ্যমে অপমানকর কিছু লেখা পাঠানো
মহিলারা যখন একজোট হয়ে একজনকে শিকারে পরিণত করতে তার সম্বন্ধে হাজার হাজার টেক্সট মেসেজ পাঠান ফোনের মাধ্যমে, তাকে টেক্সট যুদ্ধ বা আক্রমন বলে।
কোন শিশু বা কিশোরকে অপমান করার মত কোন মেসেজ কখনো আপনার ফোনের মাধ্যমে পাঠাবেন না। আপনি এর ফলে আপনার পারিবারিক অর্থের অপচয় ডেকে আনতে পারেন এই কাজের মাধ্যমে, যা দণ্ডনীয় অপরাধও বটে।
ইমেল বা মোবাইলের মাধ্যমে শাসান ছবি বা ইমেল পাঠানো
দুষ্কৃতিরা অপ্রীতিকর বা শাসান মেসেজ পাঠাতে পারেন মহিলাদের, এটা না অনুভব করেই যে যা সম্মুখে বলা যায় না তা শাসান মেসেজের মাধ্যমে ব্যাক্তিকে অধিক আঘাত করতে পারে।
তাই কখনো কারুকে ইন্টারনেট বা মোবাইলের মাধ্যমে শাসাবেন না, কারন যেই শিশু বা কিশোরকে আপনি আক্রমন করলেন এর মাধ্যমে, আপনি জানেন না তাকে তীব্র আঘাত করতে পারে, যা তার প্রাণ পর্যন্ত নিয়ে নিতে পারে।
সাইবার বুল্যিং এর প্রভাব
একজন ব্যাক্তির উপর সাইবার বুল্যিং অনেক ভাবে পতিক্রিয়া করতে পারে, যেমন
- মানসিক বিপর্যয় – ক্রোধ, হতাশা, অপমান, দুঃখ, ভয় বা প্রতিবন্ধকতা
- কর্মক্ষেত্রে বা স্কুলের কাজে ব্যাঘাত
- চাকরী ছেড়ে দেওয়া, স্কুল পাল্টানো বা ক্লাসে ফেল করা
- অপরাধ মূলক কাজে যুক্ত হওয়া
- কোন জিনিসের অপব্যবহার
- স্কুলের খেলার মাঠে অস্ত্র নিয়ে যাওয়া
- আত্মহত্যা
ভারতীয় আইনে সাইবার বুল্যিং নিয়ে নির্দিষ্ট কোন ধারা না থাকলেও, আইটি এক্ট ৬৭ দ্বারা এই সমস্ত ব্যপারকে দেখতে পারে।