প্রচুর সংখ্যক মহিলা ইদানিং কালে সাইবার ক্রাইমে আক্রান্ত হচ্ছেন। ইন্টারনেটের উত্তরোত্তর ব্যাপ্তি আর মোবাইলের মাধ্যমে তথ্যের দ্রুত প্রসার সব কিছু মিলে কিছু নতুন ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দিয়েছে, যার দ্বারা মহিলারা বিপদে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই বিপদ সমুহের সম্বন্ধে অবগত থাকাটা জরুরী।

যে সমস্ত ব্যাক্তিগত কম্পিউটারে কোন রূপ সাবধানতা অবলম্বন করা হয় না, সেগুলি সহজেই অসামাজিক কর্মকাণ্ডের শিকার হয়ে ওঠে। ভাইরাস, ট্রোজান, কি-লগার এমন কি সময়ে সময়ে সত্যিকারের হ্যাকারও সেই বিপদের কারন হয়ে ওঠে। এর ফলে, তথ্য চুরি, তথ্য গায়েব হয়ে যাওয়া, ব্যাক্তিগত গোপন তথ্যের অযাচিত প্রকাশ, পাসওয়ার্ড ইত্যাদি গোপন তথ্যের চুরি ইত্যাদি অনেক হানি হতে পারে। সেহেতু এমন কিছু ঘটার আগেই নিজের কম্পিউটারকে সুরক্ষিত এবং সংরক্ষিত করুন।

আপনার কম্পিউটার ব্যবহারের সময়ে যা যা মনে রাখবেন

আপনার ওয়েবক্যামটি কানেক্ট করা অবস্থাlতে রেখে স্থান পরিত্যাগ করবেন না।

এমন প্রচুর অ্যাপ্লিকেশান আছে যারা আপনার ক্যামেরা চালু করে আপনার অজান্তেই আপনার গতিবিধির উপর নজরদারি ছালাতে সক্ষম। তাই সুরক্ষার জন্য, স্থান পরিত্যাগের আগে আপনার ক্যামেরাটিকে বন্ধ করুন ও ক্যামেরার লেন্সটিকে বন্ধ করুন বা ঢেকে দিন। আপনার ব্যবহার হয়ে গেলে আপনার কম্পিউটারটি যথাযথ ভাবে বন্ধ করুন এবং তার সাথে যুক্ত সকল ডিভাইস যেমন, মনিটর, মোডেম, স্পিকার ইত্যাদির সাথে সংযোগ ছিন্ন করুন।

ব্যবহারের আগে এক্সটারনাল ডিভাইস স্ক্যান করে নিন। আপনার ব্যক্তিগত কম্পিউটারে কোনো এক্সটারনাল ডিভাইস যেমন USB ব্যবহার করার আগে তাকে স্ক্যান করে নিন। অপরিচিত ব্যাক্তিকে এক্সটারনাল ডিভাইস ব্যবহার করতে না দেওয়াই শ্রেয়।

আপনার ডাটা ব্যাকআপ করুন:

বজ্রপাত বা ঝড় বা এরকম কারনে বিদ্যুৎ বিভ্রাট হলে আপনার কম্পিউটার ক্র্যাস করতে পারে। আপনার ডাটা ব্যাকআপ নেওয়া থাকলে, সেই সমস্ত সময়ে আপনি আপনার তথ্য সমুহকে সুরক্ষিত রাখতে সক্ষম হবেন। যদি কোন নতুন ধরণের রানসমওয়ারে আপনি আক্রান্ত হন, সেই ক্ষেত্রেও এই ব্যাকআপ আপনাকে রক্ষা করবে। আপনি এই ব্যাকআপ নিজেও নিতে পারেন, যে কোন এক্সটারনাল হার্ড ড্রাইভে সমস্ত তথ্য পাঠিয়ে দিয়ে। 

আপনার কম্পিউটারে অ্যাকসেস নিয়ন্ত্রণ করুন:

আপনার কম্পিউটারকে যেখানে সেখানে ফেলে রাখবেন না, যাতে অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারে। আপনার কম্পিউটারের স্বাভাবিক সুরক্ষার ততটাই প্রয়োজনী যতটা টেকনিকাল সুরক্ষার প্রয়োজন।

কেবল মাত্র লাইসেন্সযুক্ত সফটওয়্যারই ব্যবহার করুন:

সব সময়ে লাইসেন্সযুক্ত সফটওয়্যার ব্যবহার করুন, যাতে সেগুলি ইন্টারনেটে যুক্ত হয়ে শেষ আপডেটটি গ্রহন করে সক্রিয় থাকতে পারে। ওপেন সোর্স সফটওয়্যারের ক্ষেত্রে সুনিশ্চিত করুন যেন আপনি প্রায়শই তাদেরকে আপডেট করেন।

ফাইন প্রিন্ট পড়ে নিনঃ “শর্তাবলী” / “বৈধতা চুক্তি” যা বিক্রেতা বা সফটওয়্যার দ্বারা প্রদত্ত, সেটিকে ইন্সটল করার আগে পড়ে নিন।

আপনার ডিভাইসগুলির সব অপারেটিং সফটওয়্যারগুলি কে আপডেট রাখুনঃ হতে পারে আপনার সময় কম, কিন্তু এই সামান্য কাজ আপনার সিস্টেমকে সুরক্ষিত রাখবে। সিকিউরিটি আপডেট এবং তার সাথে যুক্ত প্যাচ সাম্প্রতিকতম বিপদ থেকে আপনার সিস্টেমকে দূরে রাখবে। তাই, যত ব্যস্তই থাকুন না কেন, এই আপডেটগুলি অবশ্যই ইন্সটল করবেন ।

ইন্টারনেট সিকিউরিটি:

  • ইন্টারনেটে কোন কিছু ব্যবহার করার আগে কপিরাইট বিষয়ক জিনিষগুলো পড়ে নিন। ইন্টারনেটের নীতি মেনে ব্রাউজিং করুন।
  • সব সময়ে https (Hyper Text Transfer Protocol Secure) যুক্ত সাইট দেখুন, বিশেষত যখন আপনি অনলাইন লেনদেন বা ডাউনলোড করছেন, কারন তারা সুরক্ষিত।
  •  যদি SSL সার্টিফিকেট থাকে সেই ওয়েবসাইটের তবে সেই সার্টিফিকেট এর অধিকারি কে, বা তার মেয়াদ কতদিন পর্যন্ত সেগুলি দেখে নিন যাতে বোঝা যায় ওয়েবসাইটটি ভরসাযোগ্য কি না। এই সমস্ত তথ্য আপনি ওয়েবসাইটে থাকা লক আইকনটি ক্লিক করলেই জানতে পারবেন।
  •  কোন কিছু ডাউনলোড করার জন্য সব সময়ে আসল ওয়েবসাইট ব্যবহার করুন, তৃতীয় মাধ্যমে আপনাকে নিয়ে গেলে, সেই ডাউনলোডকে অস্বীকার করুন।
  •  ডাউনলোডেড ফাইল ব্যবহার করার আগে আপনার কম্পিউটারের আপডেট করা অ্যান্টি-ভাইরাস স্ক্যান করুন।
  •  অবৈধ বা মালিসিয়াস ট্র্যাফিক থেকে সুরক্ষা পেতে একটি সঠিক সফটওয়্যার ফায়ারওয়াল ইন্সটল করুন এবং কনফিগার করুন।

ডেটা সিকিউরিটি

  • আপনার অপারেটিং সিস্টেমে অটো-আপডেট সক্রিয় রাখুন এবং নিয়মিত তাকে আপডেট করুন।
  • অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যার বৈধ ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে ইন্সটল করুন। এই সফটওয়্যারটি যেন স্বয়ংক্রিয় ভাবে সাম্প্রতিকতম ভাইরাসের সম্পূর্ণ বিবরণ পেয়ে যায়।
  • “এঙ্ক্রিপ্সন” ব্যবহার করুন আপনার সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সুরক্ষিত রাখতে।
  •  কম্পিউটারের “এডমিন” অ্যাকাউন্ট তথা ইমেইল বা ব্যাঙ্কিং অ্যাপ্লিকেশনের পাসওয়ার্ড যেন শক্তিশালী হয় সেটা নিশ্চিত করুন।
  •  ব্যাকআপঃ আপনার কম্পিউটারের তথ্য সমূহ সময়ে সময়ে CD / DVD বা USB ড্রাইভে তুলে রাখার ব্যবস্থা করুন, যাতে করে হার্ড ডিস্ক করাপ্ট হয়ে গেলে আপনি কোন তথ্য না হারান।
  •  রিকভারি ডিস্কঃ আপনার কম্পিউটারের প্রস্তুত কারক কম্পানি বা বিক্রেতা যেই রিকভারি ডিস্ক আপনাকে দিয়েছেন, সেটি যত্ন সহকারে তুলে রাখুন, যাতে বুট ফেলিওর হলে, আপনি আপনার অপারেটিং সিস্টেম কে আবার ফিরে পান। বুট ফেলিওর সাধারনত অবৈধ ড্রাইভার বা অজানা সফটওয়্যারের কারনে হয়।
  •  অপারেটিং সিস্টেম সঠিকভাবে কাজ করার জন্য স্টার্ট আপ প্রোগ্রাম গুলি পর্যবেক্ষণ বা নিয়ন্ত্রণ করা উচিত ।

ব্রাউসার সিকিউরিটি:

  • আপনার ওয়েব ব্রাউজারকে সব সময়ে সাম্প্রতিকতম প্যাচ দ্বারা আপডেট করুন।
  • ব্রাউজারের সাথে থাকা প্রাইভেসি বা সিকিউরিটি সেটিং সমূহ ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
  •  তথ্য ফিলটার করার সফটওয়্যার ব্যবহার করুন।
  •  আপনার সার্চ ইঞ্জিনে সেফ সার্চ সর্বদা “অন” রাখুন।

ইমেইল সিকিউরিটি:

  • সব সময়ে আপনার ইমেইলে শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন।
  • ইমেইল অ্যাটাচমেন্ট ফাইল গুলিকে আপনার আপডেট করা অ্যান্টি-ভাইরাস দ্বারা এবং অ্যান্টি -স্পাই দ্বারা স্ক্যান করে ব্যবহার করুন।
  •  স্প্যাম ফোল্ডার সব সময়ে খালি রাখবেন।

ওয়্যারলেস সিকিউরিটি:

 

  • সিস্টেম প্রদত্ত এডমিন পাসওয়ার্ড পালটে দিন।
  • WPA (Wi-Fi Protected Access) / WEP এঙ্ক্রিপ্সন কে অন করে দিন।
  • সিস্টেম প্রদত্ত SSID পালটে দিন।
  •  ম্যাক অ্যাড্রেস ফিলটার সক্রিয় করে দিন।
  •  যখন ব্যবহার করছেন না, তখন আপনার ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দিন।

মোডেম সিকিউরিটি

  • সিস্টেম প্রদত্ত পাসওয়ার্ড পালটে দিন। যখন ব্যবহার হচ্ছে না তখন বন্ধ করে রাখুন।
Page Rating (Votes : 1)
Your rating: